বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি প্রবাসীরা। তাদের শ্রমে-ঘামে দেশ এগিয়ে চলেছি। দক্ষতা অর্জন করে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদেশ-ফেরত মানুষের পাশেও দাঁড়াতে হবে। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেই কাজগুলো করার চেষ্টা করছে।
সোমবার (১৩ মে) সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের যৌথ অর্থায়নে ইমপ্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্ট্রিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা-২) প্রকল্পের অবহিতকরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ আহ্বান জানিয়েছেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।
ব্র্যাক সিলেট অঞ্চলের মাইগ্রেশন রিইন্টিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারের কেইস ম্যানেজমেন্ট অফিসার মীর আরশাদুল হক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশের অন্যতম অভিবাসনপ্রবণ জেলা সিলেটের বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর মধ্যে নিরাপদ অভিবাসন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও বিদেশ-ফেরতদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্র্যাক।
বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে অনুষ্ঠানের সভাপতি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকরা অন্যান্য দেশের চাইতে খুব কম পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এর মূল কারণ প্রশিক্ষণের অভাব, এমনকি অনেকে প্রশিক্ষণ না নিয়েই শুধুমাত্র সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ করতে চলে যান। এতে তারা আরও বেশি বিপদের সম্মুখীন হন।’
সভাপতি তার বক্তব্যে নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার পূর্বে তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে সবাই মিলে বিদেশ-ফেরতদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। এজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার নুসরাত জাহান নিশাত। তিনি প্রত্যাশা-২ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের বলেন, ‘বিদেশ-ফেরত বাংলাদেশিরা যেন দেশে এসে ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারেন-সেজন্য অনেকদিন ধরে ব্র্যাক কাজ করছে। ২০১৭ থেকে ২০২২ এ সময়ে প্রত্যাশার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন শেষে আমরা এখন দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু করেছি। সারা দেশে মাঠ পর্যায়ে আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিলেট মাইগ্রেশন ও রিইন্ট্রিগ্রেশন সেন্টারের মাধ্যমে সিলেট জেলার সঙ্গে সঙ্গে মৌলভীবাজারের প্রবাসীদেরও সেবা দেওয়া হচ্ছে।’
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরুল হাসান। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘দালালদের মাধ্যমে না গিয়ে বৈধ উপায়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্র্যাকের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরও কাজ করছে। এ সুবিধাগুলো নিলে বিদেশ যাওয়ার সময় মানুষের ঝুঁকি কমবে। বিদেশ যাওয়ার আগেই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সঠিক উপায়ে যাওয়া উচিত।’
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেটের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত আনজুম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হারুন-অর রশীদ। জেলা পর্যায় প্রকল্প অবহিতকরণ এ সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী অনিক আহমেদ অপু ও বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা শিরিনা আক্তার।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলার অভিবাসন বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সরকারি কর্মকর্তারা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা, বিদেশ-ফেরত অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।
ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এ প্রোগ্রাম ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ-ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
https://www.kalbela.com/country-news/87834
2024-05-14 10:53:01