আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হতে পঞ্চগড়ের যাচ্ছে দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে সরগরম হয়ে উঠছে ভোটের মাঠ।প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সরেজমিন দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি ও চায়ের দোকানগুলোতে চলছে প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রাম গঞ্জের হাট-বাজার, অলিগলিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। সমর্থকদের গণসংযোগসহ উঠান বৈঠক ও পথসভা চলছে প্রতিদিন। গানে গানে ভোট চাওয়া হচ্ছে মাইকের মাধ্যমে। জমজমাট হয়ে উঠেছে নির্বাচনের প্রচারণা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের তিন জন, বিএনপির এক জন, স্বতন্ত্র একজন সহ মোট পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ চার জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা দিন রাত এক করে ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। ভোটারদের কাছ থেকে সারা পেয়ে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সব প্রার্থী।
তারুণ্যের শক্তিকে পুঁজি করে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মখদুম মাশরাফি যুক্তি মুঠোফোনে কালবেলা প্রতিবেদককে বলেন, ‘দেবীগঞ্জের মানুষের পবিত্র ভোটে আমার বাবা তিন বার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের সাথে বাবার যে সম্পৃক্ততা এবং সাধারণ মানুষ যেভাবে তাকে ভালোবাসে ঠিক সেভাবেই তার সন্তান হিসেবে আমাকেও ভালোবাসে। এছাড়া আমি নতুন প্রজন্মের প্রার্থী। নতুন ভোটাররা বিশেষত ইয়ং যারা আছে তারা আমাকে সমর্থন করছে এবং নির্বাচনে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। সর্বোপরি, যেখানেই ভোট চাইতে গিয়েছি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থন পেয়েছি।’
হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শালডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোদন মোহন রায়। সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোটারদের সর্বোচ্চ ভোট পাবেন বলে অনেকই মনে করছেন। ভোটের মাঠে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভোটের পরিস্থিতি বেশ ভালো। সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমার ধারণা এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ ভোটার আমার পক্ষে আছে।’
উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ মিঠু ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীর্ঘ দিন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সুবাদে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে। অনেকে মনে করছেন একারণে ভোটের মাঠে বেশ সুবিধাজনক স্থানে রয়েছেন তিনি। মুঠোফোনে ভোটের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দলীয় পরিচয়ে আমার কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন।’
সদ্য বহিষ্কৃত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিমুল ইসলাম বুলবুল কাপ পিরিচ প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও ভোটের মাঠের প্রচার- প্রচারণায় এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ জনসংযোগ বেশ ভালো চলছে। আমার প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে। আল্লাহ চাইলে নির্বাচনে জয়ী হবো।’
ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকা আরেক প্রার্থী হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ। ২০১৪ সালে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করেন। তবে গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে যান বর্তমান চেয়ারম্যানের কাছে। এবারের নির্বাচনে পুণরায় আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকায় মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, আলোচনা তত বাড়ছে কে হবেন আগামী পাঁচ বছরের জন্য দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সৎ, যোগ্য, পরোপকারী ও বিপদে যাকে কাছে পাবেন এমন প্রার্থীকেই বিজয়ী করবেন তারা। যে প্রার্থী দেবীগঞ্জের উন্নয়ন করতে পারবে, সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করতে পারবে তাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করতে চান সাধারণ ভোটাররা।
এদিকে, নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেবীগঞ্জে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা অপৃতকর ঘটনা ঘটে নি।
উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফুল আলম বলেন, ‘প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে চলছেন কী না তা নিশ্চিত করতে মাঠে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন নি।’
উল্লেখ্য, দেবীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৯৮ হাজার ৫৩১ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) ভোটার ২ জন।
https://www.kalbela.com/country-news/88094
2024-05-15 06:28:55