মানবচালিত বিমানের মধ্যে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী হচ্ছে নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫। শব্দের চেয়ে কয়েক গুণ দ্রুত গতিতে ছুটতে পারা এই বিমান দেখতে অনেকটা বুলেটের মতো।
নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫ বিমান আসলে একটি রকেট, যার সঙ্গে লাগানো থাকত ককপিট। আর সেই ককপিটে বসেই এক্স-১৫ চালাতেন পাইলট। রকেটচালিত সুপারসনিক এই বিমানটি এক্স-প্লেন সিরিজের অংশ।
ছয় দশকের বেশি সময় আগে প্রথমবার আকাশ ছুঁয়েছিল নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী এবং ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা), নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫ বিমানটি তৈরি করে।
১৯৫৯ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল এই সুপারসনিক। তারপর থেকে ৯ বছরে প্রায় ২০০টি টেস্ট ফ্লাইটের সাক্ষী হয়েছে নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫।
বিশেষ এই বিমান চালানোর জন্য ১২ জনের একটি দল তৈরি করেছিল মার্কিন বিমানবাহিনী। তাদের মধ্যে ছিলেন চাঁদে পা রাখা নীল আর্মস্ট্রংও। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরীক্ষামূলকভাবে ৬০টি বিমান তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এগুলোর মধ্যে ‘এক্স’ সিরিজের এই বিমানগুলোও রয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে এর উৎপাদন শুরুর সময় এক্স-১৫ সুপারসনিকের গতি ছিল ঘণ্টায় ৭০০ মাইল।
গতির মতোই এক্স-১৫ বিমান উড়ানোর পদ্ধতিও ছিল আলাদা। অন্যান্য বিমানের মতো এটি রানওয়ে থেকে উড্ডয়ন করত না। বরং অন্য একটি বিমানে করে আকাশে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হতো এক্স-১৫। আর এই কাজটি করা হতো বি-৫২ বোমারু বিমান দিয়ে।
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৫ হাজার ফুট উঁচুতে নিয়ে এক্স-১৫’কে আকাশে ছেড়ে দিত বি-৫২ বোমারু বিমান। তখন আকাশে গ্লাইডারের মতো ভেসে থাকত ৫০ ফুট লম্বা সুপারসনিক বিমান এক্স-১৫। এরপরই ইঞ্জিন চালু করতেন বিমানের পাইলট।
এক্স-১৫ অবতরণের ধরনও ছিল ভিন্ন। অন্য বিমান রানওয়েতে অবতরণ করলেও এক্স-১৫ নামত শুষ্ক হ্রদের বিছানা বা প্লেয়ায়।
এ ধরনের বিমানের বিশেষ নকশার কারণেই এমনটা করতে হতো। এত গতিসম্পন্ন হলেও প্রায় ২০০টি টেস্ট ফ্লাইটে মাত্র দুবার জরুরি অবতরণ করতে হয়েছে এই সুপারসনিককে। তার মধ্যে ১৯৬৭ সালে মাইকেল অ্যাডামস নামে এক চালকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
তবে ওই দুই দুর্ঘটনা বাদ দিলে এক্স-১৫ এর ৯ বছরের টেস্ট ফ্লাইটে বিশেয় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বরে অবসর নেয় নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫। তবে অবসর নেওয়ার আগের বছর একটি রেকর্ড গড়ে বিমানটি।
১৯৬৭ সালে এই সুপারসনিকের ককপিটে বসে একে ঘণ্টায় ৪ হাজার ৫২০ মাইল বা মাক ৬.৭ বেগে উড়িয়েছিলেন পিট নাইট। অর্থাৎ শব্দের চেয়ে ৬.৭ গুণ বেশি জোরে আকাশে ছুটেছিল নর্থ আমেরিকান এক্স-১৫।
https://www.kalbela.com/world/others/88122
2024-05-15 12:09:55