২০০৯ সালের ২৫ মে। সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আইলা। ১৫ বছর পর চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে সেই দুঃস্বপ্ন ফের ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
তাদের মতে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হচ্ছে ‘রেমাল’ নামে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়।
আগামী ২৫ মে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এমন তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর।
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আগামী ২৪ মে বঙ্গোপসাগর থেকে শক্তি বাড়িয়ে একটি ঘূর্ণিঝড় ভূভাগের দিকে ধেয়ে আসতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণ রূপ নিলে এর নাম হবে রেমাল। রেমাল নামক এ ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছে ওমান। আরবিতে যার অর্থ বালি।
এ নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে। তবে রেমাল কতটা ভয়াবহ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে আগামী ২০ মে থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ স্পষ্ট হতে পারে।
যা ২৪ মে থেকে শক্তি বাড়িয়ে স্থলভাগের দিকে এগোতে পারে। তবে কোথায়, কত গতিতে এই ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
তবে অনুমান করা হচ্ছে, আগামী ২৫ মে সন্ধ্যার পর এ ঘূর্ণিঝড় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২৪ মে রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে উপকূল এলাকায়। বৃষ্টি চলবে ২৬ মে পর্যন্ত।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় মূলত বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে ও শেষ হয়ে যাওয়ার পরে।
বাংলাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ শুরু হয় সাধারণত ৩০ মে থেকে ৭ জুনের মধ্যে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম মার্চ মাসে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোনো ঘূর্ণিঝড়-নিম্নচাপ কিংবা লঘুচাপও সৃষ্টি হয়নি। তাই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে শক্তি জমা হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ২০ মের পরে সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাই এটি খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি ও শক্তিশালী হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি প্রধান উপাদানের মধ্যে ইতোমধ্যে তিনটির উপস্থিতি রয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে।
এ আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ২০ থেকে ২৭ মের মধ্যে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ২০ মে থেকে এ সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ স্পষ্ট হতে পারে।
তবে কোথায়, কত গতিতে এটি আঘাত হানতে পারে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের মধ্যে কোথাও এটি আছড়ে পড়তে পারে।
এদিকে সারা দেশে বৃষ্টি একেবারেই কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা আবারও বেড়েছে। তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে দেশের ৪২ জেলা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বুধবার (১৫ মে) তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং এ কম বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী শনিবার (১৮ মে) পর্যন্ত। বাড়বে তাপপ্রবাহের বিস্তৃতিও।
তবে আগামী রোববার (১৯ মে) থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে কমতে শুরু করবে তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে। ফলে তাপমাত্রাও বেড়েছে। আগামী শনিবার (১৮ মে) পর্যন্ত তাপমাত্রা বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় মূলত মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ১৯ মে থেকে আবার বৃষ্টি বেড়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।
২০০৯ সালের ২৫শে মে প্রচণ্ড শক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা।
যার বাতাসের গতিবেগ ছিল ৭০-৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এ আইলার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলাগুলো। আইলায় প্রাণহানি বেশি না হলেও উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে ব্যাপকহারে।
কৃষি জমি, চিংড়ির খামার, পুকুর, ডোবা সবকিছু লবণের বিষে আক্রান্ত হয়। ফলে জীবন জীবিকায় চরম সংকট দেখা দেয়।
১৫ বছর পরেও ওই অঞ্চলের মানুষ আইলার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে সেই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ১৫তম বর্ষের সন্ধ্যাতেই ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ আছড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
https://www.kalbela.com/national/88398
2024-05-17 15:07:00