বনে-জঙ্গলে পড়ে থাকা সুপারি গাছের খোল এখন আর ফেলনা নয়। একসময় বাগানে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গেলেও এখন এই খোল দিয়ে তৈরি হচ্ছে থালা, বাটি, নাশতার প্লেট, ট্রেসহ নানা রকমের তৈজসপত্র। বাজারে ওয়ানটাইম প্লেটের বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব এসব সামগ্রীর ব্যবহার শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়।
বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা, অবশ্যম্ভাবীভাবেই যার আঁচ লেগেছে বাংলাদেশের বাজারেও। রেডিমেড গার্মেন্টস খাতে এরই মধ্যে সবুজায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, তৈরি হচ্ছে পানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্ট, আর বাড়ছে টেকসই পণ্যের উৎপাদন। বাংলাদেশে এ টেকসই পণ্যের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন সুপারির খোল থেকে তৈরি প্লেট, বাটি, ট্রেসহ অন্তত ডজনখানেক তৈজসপত্র।
পঞ্চগড়ে সুপারি গাছের পরিত্যক্ত খোল দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব কাপ-পিরিচ থালা বাটি চামচ ফুটবক্স তৈরির কারখানা। সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
প্রথমে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২ টাকা পিস করে সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ করা হয়। খোলগুলোকে নিমপাতা ও লেবুর রসযুক্ত পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পাতার খোল ছাঁচের মেশিনে বসিয়ে তাপ এবং চাপপ্রয়োগ করে নানা আকৃতি দেওয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোলাকার বাটি, গোলাকার প্লেট, চৌকোনা প্লেট, লাভ প্লেট, চামস, ট্রেসহ ৮ ধরনের জিনিস প্রস্তুত করা হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, রেস্টুরেন্ট, দোকানে প্লাস্টিকের পরিবর্তে সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি জিনিসের ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এর প্রস্ততকারকরা।
বিয়ে বাড়ি কিংবা যে কোনো অনুষ্ঠানে ওয়ান টাইম তৈজসপত্রের ব্যবহার এখন বেশ জনপ্রিয়। আর এসব তৈজসপত্র তৈরি হয়ে থাকে প্লাস্টিক অথবা ফোন দিয়ে। কিন্তু এগুলো ব্যবহারে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়। পচে যেতে বা ধ্বংস হতে অনেক সময় লাগে। ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
পরিবেশের কথা বিবেচনা করে পঞ্চগড়ের বোদা পৌর এলাকায় জামাদার পাড়া শিমুলতলী মোড়ে গড়ে উঠেছে পরিবেশবান্ধব সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈরি ওয়ান টাইম তৈজসপত্র তৈরির কারখানা।। প্রাকৃতিক এবং দেখতে সুন্দর হওয়ায় এগুলো ব্যবহারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
প্লাস্টিক, ফোম ও কেমিক্যালের বিকল্প হিসেবে সুপারি গাছের পরিত্যক্ত খোল দিয়ে তৈরি, ওয়ান টাইম প্লেট, বাটি, চামুচ পিরিচ ফুটবক্সসহ নানা সামগ্রী তৈরি করে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে পঞ্চগড়ের বোদায় স্থাপিত পরিবেশবান্ধব ইকো গ্রিন বিডির তৈজসপত্র।
জীবাণুমুক্ত করে তৈরি এই সকল পণ্য ব্যবহারের পর অতি সহজেই পচে জৈবসার হয়ে যায়। আর প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, দেখতে সুন্দর হওয়ায়, এর চাহিদা যেমন বেশি তেমনি দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই মিল গড়ে ওঠায় তৈরি হয়েছে নারী পুরুষের কর্মসংস্থান। বাড়িতে বেকার না থেকে বাড়তি আয়ের জন্য, বাড়ির কাজের ফাঁকে মিলে কাজ করে আয় করে সংসারের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।
মিল কর্তৃপক্ষ জানান, ওয়ান টাইম তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্লাস্টিক ও ফোমের তৈরির তৈজসপত্র পরিবেশবান্ধব নয়। এগুলো পচে বা ধ্বংস হতে অনেক সময় লাগে পরিবেশের ক্ষতি করে। আর সুপারি গাছের খোলের তৈরি এই সকল পণ্য প্রাকৃতিক, পরিবেশবান্ধব এবং ব্যবহারের পর সহজে পঁচে জৈবসার হয়। তাই এর চাহিদাও অনেক বেশি। এই কারখানা গড়ে ওঠায় মিল অভ্যন্তরে নারী পুরুষের কর্মসংস্থান ছাড়াও এলাকার অনেক মানুষ গ্রামে গ্রামে ঘুরে সুপারি গাছের খোল সংগ্রহ করে মিলে বিক্রি করে আয় রোজগার করছেন।
পঞ্চগড় বিসিক কর্মকর্তা জুয়েল চন্দ্র সেন জানান, আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক ও দেশীয় পণ্য উৎপাদনের নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের দ্রুততার সঙ্গে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানান বিসিক কর্মকর্তা।
পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র তৈরির এ কারখানা স্থানীয় দরিদ্র বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প বিকাশে এলাকাভিত্তিক বাস্তবধর্মী নীতিমালা গ্রহণ, ঋণ সহযোগিতা সহজীকরণ করা গেলে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানা গড়ে ওঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, কমবে আমদানিনির্ভরতা এবং কাজের খোঁজে শহরমুখিতা।
সুপারির খোলে তৈরি প্লেট, বাটি নিত্যদিন ব্যবহারের পাশাপাশি এককালীন ব্যবহারের জন্য উপযোগী। প্লাস্টিকের ওয়ান-টাইম গ্লাস, প্লেট বর্তমানে পরিবেশদূষণের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর একটি। যদি সুপারির খোলে তৈরি পণ্য প্লাস্টিককে প্রতিস্থাপন করতে পারে, তাহলে তা একদিকে যেমন পরিবেশবান্ধব হবে, অন্যদিকে ক্রেতাদের জন্যও হবে সাশ্রয়ী।
https://www.kalbela.com/country-news/88657
2024-05-17 09:52:18